Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution

লন্ডনে দুই কক্ষের বাসায় ২১ জনের বাস

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়াতে কয়েক বছর ধরে কাজ করছে যুক্তরাজ্য সরকার। সরকারি হিসাব বলছে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ১৩ হাজার ১৫ জন। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে যেটা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪২২ জন। একটা সময় পুরো যুক্তরাজ্যে যত বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন, এখন শুধু লন্ডনে সেই পরিমাণ বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন।

শাহাদাতের মতো চলতি বছর আইন বিষয়ে পড়তে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান ভারতীয় শিক্ষার্থী রুশভ কৌশিক। বন্ধুদের সঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে উঠেছেন। যদিও আরেকজনের সঙ্গে কক্ষে থাকতে হয়।

কৌশিক জানান, বন্ধুরা মিলে ওই ফ্ল্যাটে উঠতে তাঁদের অগ্রিম হিসেবে প্রায় ২২ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে বাড়িওয়ালা বিশ্বাস করেন, এমন এক ব্যক্তির নিশ্চয়তাও জোগাড় করতে হয়েছে তাঁদের। কৌশিক বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই ব্যয়বহুল।’

যুক্তরাজ্যে চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিষয়ে পড়তে এসেছেন ইতালির জুলিয়া তোরতোরিচে। আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। লন্ডনে বাড়ি খুঁজে পাওয়া যে খুবই দুষ্কর একটি কাজ, তিনি সে অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। তিনি বললেন, ‘ভাড়া অনেক বেশি। গত বছর আমি লন্ডনে এসেই আমার এক বন্ধুর কাছে গিয়ে উঠি। এক মাস তাঁর সঙ্গে ছিলাম। কারণ, বাড়ি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।’

যুক্তরাজ্যের ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব স্টুডেন্টসের (এনইউএস) নেহাল বাজওয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যতটা সম্ভব বিদেশি শিক্ষার্থী আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর একটা বড় কারণ, এই শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক বেশি ফি পাওয়া যায়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এত বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে, যাঁদের বসবাসের বন্দোবস্ত এসব বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নেই।’

নাজমুস শাহাদাত যখন লন্ডনে গিয়ে পৌঁছালেন, তখন সেখানে তাঁর কোনো থাকার জায়গা ছিল না। আইন বিষয়ে একটি কোর্স করতে যুক্তরাজ্যে গেছেন তিনি। তবে দেশটিতে যাওয়ার পরই তিনি জানতে পারেন, যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি পড়তে গেছেন, সেখানকার আবাসনব্যবস্থা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। তাঁর কপালে চিন্তার ভাঁজ। কোথায় থাকবেন, সে উপায় খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

শাহাদাত জানান, লন্ডনে যাওয়ার পরপরই দৃশ্যপট বদলে যায়। পরিস্থিতি হয়ে ওঠে দুঃসহ। পরে অবশেষে দুই কক্ষের একটি ফ্ল্যাটে আরও ২০ জনের সঙ্গে থাকার বন্দোবস্ত হয়। শাহাদাত বলেন, ‘এভাবে থাকতে হবে, কখনো কল্পনাও করিনি। আমার শরীরে এখনো তার দাগ রয়েছে।’

শাহাদাত যে কক্ষে ছিলেন, তাতে পাতা ছিল কয়েক স্তরবিশিষ্ট অনেকগুলো বিছানা। বিভিন্ন পালায় কাজ করা শ্রমিকদের যাওয়া-আসা চলত দিনরাত। শাহাদাত বলেন, সব মিলিয়ে সেখানে ঘুমানো ছিল অসম্ভব। এর ওপর ছিল ছারপোকার যন্ত্রণা। বিছানায় থাকলেই ছারপোকা কামড়াত।

ভয়াবহ সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে শাহাদাত বলেন, ‘প্রথম কয়েক মাস তো আমি পরিবারের কারও সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলতাম না। কারণ, এভাবে এমন একটি পরিবেশে আমাকে যে থাকতে হচ্ছে, তা আমি পরিবারের কাউকে দেখাতে চাইনি। এটা ছিল অত্যন্ত দুঃখের একটি বিষয়।’

শাহাদাত এখন একটি ফ্ল্যাট ভাগাভাগি করে থাকেন। সেখানে তাঁর নিজের একটি কক্ষও আছে। তবে তিনি বললেন, লন্ডনে সাধ্যের মধ্যে বাড়ি খুঁজে পাওয়া খুবই দুষ্কর। কারণ, একটি বাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের পক্ষে রেফারেন্স ও পে-স্লিপ জোগাড় করা অনেক কঠিন বিষয়।

শাহাদাত বলেন, অনেকেই পরিবারের জমানো অর্থ দিয়ে পড়াশোনা করতে আসেন। তিনি তিন বছরের জন্য যে কোর্স করছেন, সে জন্য তাঁর ৫২ লাখ টাকা লাগছে জানিয়ে শাহাদাত বলেন, ‘আমার পরিবারের পুরো সঞ্চয় দিয়ে আমি আমার নিজের ও পরিবারের স্বপ্নপূরণ করতে এখানে এসেছি।’

দুই বন্ধুর সঙ্গে ভারতীয় শিক্ষার্থী রুশভ কৌশিক (ডানে)

দুই বন্ধুর সঙ্গে ভারতীয় শিক্ষার্থী রুশভ কৌশিক (ডানে)ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়াতে কয়েক বছর ধরে কাজ করছে যুক্তরাজ্য সরকার। সরকারি হিসাব বলছে, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে দেশটিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ১ লাখ ১৩ হাজার ১৫ জন। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে যেটা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৪২২ জন। একটা সময় পুরো যুক্তরাজ্যে যত বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন, এখন শুধু লন্ডনে সেই পরিমাণ বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন।

শাহাদাতের মতো চলতি বছর আইন বিষয়ে পড়তে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান ভারতীয় শিক্ষার্থী রুশভ কৌশিক। বন্ধুদের সঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে উঠেছেন। যদিও আরেকজনের সঙ্গে কক্ষে থাকতে হয়।

কৌশিক জানান, বন্ধুরা মিলে ওই ফ্ল্যাটে উঠতে তাঁদের অগ্রিম হিসেবে প্রায় ২২ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এর সঙ্গে বাড়িওয়ালা বিশ্বাস করেন, এমন এক ব্যক্তির নিশ্চয়তাও জোগাড় করতে হয়েছে তাঁদের। কৌশিক বলেন, ‘এটা আমাদের জন্য খুবই ব্যয়বহুল।’

যুক্তরাজ্যে চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিষয়ে পড়তে এসেছেন ইতালির জুলিয়া তোরতোরিচে। আরও দুই বন্ধুর সঙ্গে একটি ফ্ল্যাটে থাকেন তিনি। লন্ডনে বাড়ি খুঁজে পাওয়া যে খুবই দুষ্কর একটি কাজ, তিনি সে অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। তিনি বললেন, ‘ভাড়া অনেক বেশি। গত বছর আমি লন্ডনে এসেই আমার এক বন্ধুর কাছে গিয়ে উঠি। এক মাস তাঁর সঙ্গে ছিলাম। কারণ, বাড়ি খুঁজে পাচ্ছিলাম না।’

যুক্তরাজ্যের ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব স্টুডেন্টসের (এনইউএস) নেহাল বাজওয়া বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যতটা সম্ভব বিদেশি শিক্ষার্থী আকর্ষণের চেষ্টা চালাচ্ছে। এর একটা বড় কারণ, এই শিক্ষার্থীদের কাছে অনেক বেশি ফি পাওয়া যায়। কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এত বেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করাচ্ছে, যাঁদের বসবাসের বন্দোবস্ত এসব বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নেই।’

শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চ বাড়িভাড়ার লাগাম টেনে ধরার আহ্বান জানিয়ে আসছে এনইউএস। সংগঠনটি বলছে, বিশেষত বিদেশি শিক্ষার্থীদের বাড়িভাড়ার এই আর্থিক বোঝা বহন করতে হচ্ছে।

বান্ধবীদের সঙ্গে ইতালির জুলিয়া তোরতোরিচে (ডানে)

বান্ধবীদের সঙ্গে ইতালির জুলিয়া তোরতোরিচে (ডানে)ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করা একটি দাতব্য সংস্থা ইউনিপোল। সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী মার্টিন ব্লেকি বলেন, ‘তাদের পক্ষ থেকে বিনা মূল্যে যে খাবার দেওয়া হয়, সেখান থেকে খাবার নেওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তাদের অনেককে হয়তো দেশে ফিরে যেতে হতে পারে। এটা খুবই দুঃখজনক একটি বিষয়। এভাবে একজন মানুষের স্বপ্ন নীরবে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে।’

এ বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘বিভিন্ন দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আসতে পারলে তা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য যেমন ভালো, তেমনি আর্থিক প্রবৃদ্ধিও হয়। তাই আমরা বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি আবাসন সংস্থাকে এই শিক্ষার্থীদের আবাসনের বিষয়টি বিবেচনা করা এবং সেই অনুযায়ী তাঁদের সাহায্য করতে উত্সাহ দিই।’

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.