Nazihar News Network

পশ্চিমবঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ জয়ের পথে বাম-কংগ্রেস জোট

পূর্ব ভারতের কিছু ছোট রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনের কিছু বিস্ময়কর ‘প্রবণতা’ লক্ষ করা গেছে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আজ উত্তর-পূর্ব ভারতের তিন রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি কেন্দ্রসহ ভারতের মোট চার রাজ্যে বিধানসভা উপনির্বাচনের ভোট গণনা চলছে।

পূর্ব ভারতের কিছু ছোট রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের উপনির্বাচনের কিছু বিস্ময়কর ‘প্রবণতা’ লক্ষ করা গেছে আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত। আজ উত্তর-পূর্ব ভারতের তিন রাজ্য এবং পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি কেন্দ্রসহ ভারতের মোট চার রাজ্যে বিধানসভা উপনির্বাচনের ভোট গণনা চলছে।

প্রথমত, দুপুর ১২টা পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্ময়কর ‘প্রবণতা’ লক্ষ করা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের একটি মাত্র উপনির্বাচনকে কেন্দ্র করে। মুর্শিদাবাদের সাগরদিঘিতে গত ১২ বছরে এই প্রথম, তৃণমূল কংগ্রেসকে পেছনে ফেলে প্রায় ১০ হাজার ভোটে এগিয়ে রয়েছেন বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের জোট প্রার্থী বায়রন বিশ্বাস। প্রায় ৭০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটারের এ আসনে ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসার পরে তৃণমূল কংগ্রেস কখনো হারেনি।

কিন্তু আজ দুপুর ১২টা নাগাদ মনে হচ্ছে কংগ্রেস প্রার্থী, (যাকে বামফ্রন্ট সমর্থন করছে) সেই বায়রন বিশ্বাস সাগরদিঘিতে জিততে পারেন। যদি তা-ই হয়, তাহলে ১৯৭২ সালের পর এই প্রথম কংগ্রেস আসনটি জিতবে। ১৯৭৭ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আসনটি ছিল সিপিআইএমের দখলে।

যেহেতু এ আসনের অধিকাংশ ভোটার মুসলমান সম্প্রদায়ের, তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, সংখ্যালঘু সমাজের বড় অংশ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গে সাধারণত ঘটে না। আর এ ছাড়া ২০২১ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) এ আসনে প্রায় ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, যা বর্তমানে কমে ১০ শতাংশের আশপাশে চলে এসেছে। অর্থাৎ, স্পষ্টভাবেই তৃণমূলবিরোধী বিজেপি ভোট আবার নতুন করে বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের দিকে যাচ্ছে। এটা পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক নির্বাচনী রাজনীতিতে পশ্চিমবঙ্গে একটি নতুন ঘটনা বলা যেতে পারে।

কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘সাগরদিঘির ফলাফল প্রমাণ করছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে হারানো সম্ভব। আমরা বরাবরই জোট চেয়েছি এবং সিপিআইএম একটা সময়ে জোট নিয়ে কিছু সন্দেহ প্রকাশ করলেও আমরা কখনোই তা করিনি। এ সাফল্য কংগ্রেস এবং জোটের সাফল্য।’

দ্বিতীয়ত, গত ১১ ফেব্রুয়ারি প্রথম আলোতে যেমন বলা হয়েছিল যে ত্রিপুরায় লড়াই সমানে সমান, গণনার দিন দেখা যাচ্ছে ত্রিপুরায় জোর লড়াই হচ্ছে বিজেপির সঙ্গে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস জোটের।

এক-তৃতীয়াংশ গণনা হয়ে যাওয়ার পর ত্রিপুরায় ৬০ আসনের মধ্যে বিজেপি এগিয়ে ৩০ আসনে, বাম-কংগ্রেস মোটামুটিভাবে ১৮টিতে এবং উপজাতীয় দল তিপ্রা মথা ১২টিতে।

তবে বর্তমান ‘প্রবণতা’ চলতে থাকলে বিজেপি এককভাবে সরকার গঠন করবে ত্রিপুরায়। গত বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে মোটামুটিভাবে ৩০ আসনের আশপাশেই রয়েছে বিজেপি। সরকার গঠনের জন্য ৩১ আসন প্রয়োজন।

তৃতীয়ত, এ নির্বাচনে স্পষ্টভাবেই প্রথম নির্বাচনে লড়া তিপ্রা মথা অত্যন্ত ভালো ফল করতে চলেছে ত্রিপুরায়। বিজেপির জোটসঙ্গী অপর উপজাতীয় দল ইন্ডিজিনাস পিপলস ফ্রন্ট অব ত্রিপুরাকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে তিপ্রা মথা। ত্রিপুরায় ৬০ আসনের মধ্যে ২০ আসন উপজাতি সমাজের জন্য সংরক্ষিত। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত ১২টি আসনে এগিয়ে তিপ্রা। ত্রিপুরার রাজপরিবারের সন্তান প্রদ্যুৎ দেববর্মণের নেতৃত্বাধীন দলের উত্থান উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর সব জয়ী এমএলএ-কে ধরে রাখতে পারবেন নাকি তাঁরা তিপ্রা ছেড়ে বিজেপিতে চলে যাবেন, সেটা ত্রিপুরার রাজনীতিতে এ মুহূর্তে একটা বড় প্রশ্ন।

চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মেঘালয় রাজ্যে পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান। সেখানে এখনো তৃণমূল পাঁচটি আসনে এগিয়ে রয়েছে এবং মনে করা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত তারা বেশ কয়েকটি আসন পেয়ে যেতে পারে। তা যদি হয়, তবে তৃণমূল কংগ্রেস আগামী দিনে মেঘালয় রাজ্যে অন্যতম বিরোধী দল হিসেবে উঠে আসতে পারে। আবার আঞ্চলিক দল ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) সঙ্গে হাত মিলিয়ে সরকারেও যেতে পারে। তবে সেই সম্ভাবনা কম।

এখন পর্যন্ত যা প্রবণতা, তাতে মেঘালয়ে ৬০ আসনের মধ্যে এনপিপি এগিয়ে রয়েছে ২৫টিতে। সরকার গড়তে তাদের আরও ছয়টি আসন দরকার, যার জন্য তারা বিজেপির সঙ্গে হাত মেলাবে বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে। কারণ, গতবারের সরকার এনপিপি বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধেই চালিয়েছে। এনপিপির প্রধান নেতা কনরাড সাংমাই যে শেষ পর্যন্ত ওই রাজ্যে আগেরবারের মতো মুখ্যমন্ত্রী থাকবেন, তা নিয়ে বিশেষ সন্দেহ নেই।

এর বাইরে, প্রত্যাশিতভাবেই নাগাল্যান্ডে ৬০ আসনের মধ্যে ৪০টিতে এগিয়ে রয়েছে স্থানীয় দল ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (এনডিপিপি) ও বিজেপির জোট। দুপুর ১২টা নাগাদ নিশ্চিতভাবেই বলা যেতে পারে, পৃথকভাবে বিভিন্ন দফায় ১৮ বছর ধরে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিও আবারও এ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন। তবে, তাঁকে প্রায় পুরোপুরিভাবেই নির্ভর করতে হবে বিজেপির উপর, কারণ সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় আসনের অর্ধেক আসতে পারে বিজেপি থেকে।

অর্থাৎ শেষ পর্যন্ত ত্রিপুরায় এককভাবে এবং নাগাল্যান্ড ও মেঘালয় রাজ্যে স্থানীয় দলের সঙ্গে হাত মিলিয়ে গতবারের মতোই সরকার গড়বে বলে বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত প্রবণতা দেখে অনুমান করা হচ্ছে।

1 comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.