Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution

১০ মাথার লড়াইয়ে টিকবে কোন মাথা

অধিনায়ক দুলকি চালে টস করে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ান। দু-চারটে কথা বলেন, তারপর না খেলা শুরু হয়। আর প্রথম বল থেকেই উত্তেজনার শুরু…কথাটাও কিন্তু ভুল। ক্রিকেট খেলায় উত্তেজনার শুরুই হয় অধিনায়কের কপালের পারফরম্যান্স নিয়ে। মানে ম্যাচের আগে ছোট ম্যাচ, কার কপাল কত ভালো! অর্থাৎ টস। ভাগ্য পরীক্ষায় পাস-ফেল মারা অধিনায়ককে নিয়ে আহা, উহু, যাক বাবা, বাঁচা গেল…এমন সব আক্ষেপ-উচ্ছ্বাস না করা লোক কি আছে?

উইকেট একটু এদিক-সেদিক হলে টসে জিততে সমর্থকদের মানত করার দিন কিন্তু ফুরোয়নি। নিখিল ক্রিকেট–বিশ্বের সমর্থকদের শর্ত একটাই, অধিনায়ককে সৌভাগ্যবান হতেই হবে! না হলেও সমস্যা নেই। সমর্থকেরাই মনে মনে মানতপুরাণ খুলে বসবেন! পৃথিবীর সব ক্রিকেট দলের ভক্ত টু অধিনায়কের মধ্যে এ এক অলিখিত, অদৃশ্য নিয়ম। আর সেখানে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছেন কেইন উইলিয়ামসন।

ফুটবলে অধিনায়কের কাজ কী? আর্মব্যান্ড পরে মাঠে নামো, উঠে আসার হুকুম এলে সেটা কাউকে পরিয়ে দিয়ে আসো। আর বড়জোর ফাইনাল জিতলে ট্রফিটা সবার আগে উঁচিয়ে ধরা, এ-ই তো! হকিতেও আলাদা কিছু নেই, বাস্কেটবল-বেসবলে কি অধিনায়ক আছে? লাগে? সে প্রশ্নও উঠতে পারে। কিন্তু ক্রিকেটে অধিনায়ক ছাড়া চলে না। একটি বলও না। বল কী, অধিনায়ক টস করতে না নামলে তো খেলাই শুরু হবে না!

অধিনায়ক দুলকি চালে টস করে মাইক্রোফোনের সামনে দাঁড়ান। দু-চারটে কথা বলেন, তারপর না খেলা শুরু হয়। আর প্রথম বল থেকেই উত্তেজনার শুরু…কথাটাও কিন্তু ভুল। ক্রিকেট খেলায় উত্তেজনার শুরুই হয় অধিনায়কের কপালের পারফরম্যান্স নিয়ে। মানে ম্যাচের আগে ছোট ম্যাচ, কার কপাল কত ভালো! অর্থাৎ টস। ভাগ্য পরীক্ষায় পাস-ফেল মারা অধিনায়ককে নিয়ে আহা, উহু, যাক বাবা, বাঁচা গেল…এমন সব আক্ষেপ-উচ্ছ্বাস না করা লোক কি আছে?

উইকেট একটু এদিক-সেদিক হলে টসে জিততে সমর্থকদের মানত করার দিন কিন্তু ফুরোয়নি। নিখিল ক্রিকেট–বিশ্বের সমর্থকদের শর্ত একটাই, অধিনায়ককে সৌভাগ্যবান হতেই হবে! না হলেও সমস্যা নেই। সমর্থকেরাই মনে মনে মানতপুরাণ খুলে বসবেন! পৃথিবীর সব ক্রিকেট দলের ভক্ত টু অধিনায়কের মধ্যে এ এক অলিখিত, অদৃশ্য নিয়ম। আর সেখানে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছেন কেইন উইলিয়ামসন।

কেইন উইলিয়ামসন; ঋষিসুলভ এক অধিনায়ক, যার টস ভাগ্যও ভালো

কেইন উইলিয়ামসন; ঋষিসুলভ এক অধিনায়ক, যার টস ভাগ্যও ভালোছবি: এনজেডসি

শুধু শ্মশ্রুমণ্ডিত মুখের জন্য নয়, মাঠে তাঁর আচার-আচরণও ঋষিসুলভ। পরিচ্ছন্ন ব্যাটিংটা যেন নিপাট ভদ্রলোক ব্যক্তিত্বের প্রতিফলন।জানি চোখে ভেসে ওঠা মুখটা উইলিয়ামসন। এবারের বিশ্বকাপে অধিনায়কদের মধ্যে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান। ২০১৯ ফাইনালের মর্মন্তুদ স্মৃতি মনে করে আপত্তি তোলার আগেই জানিয়ে রাখি, এই সৌভাগ্য শিরোপায় নয়, টসে। ওয়ানডেতে ৮৭ ম্যাচে ৪২টিতেই তাঁর মুদ্রা নিক্ষেপে জিতেছে নিউজিল্যান্ড (৪৮.২ শতাংশ)। জয়ের সংখ্যায় তাঁর ধারেকাছে আর কেউ নেই। তবে শতকরা হারে আছেন। আর যিনি আছেন, তাঁকে দেখেই ভাবনাটা জাগতে পারে, ক্রিকেটে ভাগ্য তাহলে সাম্যবাদী!

সাকিব আল হাসান। ব্যক্তিত্বে ও আচারে উইলিয়ামসনের উল্টো। প্রতিভাবান, চাপ সামলাতে পারেন, কিন্তু বিতর্ক সাকিবের নিত্যসঙ্গী। তেমনি সৌভাগ্যও খুব দূরে থাকে না। ওয়ানডেতে ৫৫ ম্যাচে ২৪টিতে টসে জিতেছেন (৪৩.৬ শতাংশ)। টসে জয়ের সংখ্যা অনুযায়ী এবার বিশ্বকাপে সাকিব হার মানতে পারেন শুধু উইলিয়ামসনের কাছেই। বাবর আজম (২০ বার), রোহিত শর্মা (১৭ বার), দাসুন শানাকা (১৭ বার), হাশমতউল্লাহ শহীদিরা (১৩ বার) বেশ পিছিয়ে। 

যেমনটা ম্যাচ জয়ের পরিসংখ্যানেও। উইলিয়ামসন ৮৭ ম্যাচে ৪২ জয় নিয়ে (৫০.৫৭ শতাংশ) নিয়ে সবার ওপরে। যেখানে সাকিব বেশি দূরে নয়, ৫৫ ম্যাচে ২৫ জয়, অর্থাৎ ম্যাচ জয়ের হার ৪৫.৪৫। এই বিশ্বকাপে ম্যাচ জয়ের সংখ্যায় মানে অভিজ্ঞতায় অধিনায়কদের মধ্যে সাকিব-উইলিয়ামসনই দুই সেরা। রোহিত, বাবর আজম ও শানাকারা ম্যাচ জয়ের হারে এগিয়ে থাকলেও অভিজ্ঞতায় সাকিবের চেয়ে পিছিয়ে। সাকিব আরও একটি জায়গায় এগিয়ে। এবার বিশ্বকাপে সব অধিনায়কের মধ্যে সাকিবই সবার আগে এই দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ২০০৯ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর নিশ্চয়ই মনে আছে!

অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের টস ভাগ্যও ভালো। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকার চেয়ে এগিয়ে সাকিব

অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের টস ভাগ্যও ভালো। শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক দাসুন শানাকার চেয়ে এগিয়ে সাকিবছবি : এসিসি

অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার চোট, সাকিবকে সহ–অধিনায়ক থেকে পা গলাতে হলো মাশরাফির জুতায়। সেখান থেকে ২০১১ বিশ্বকাপেও সাকিব অধিনায়ক। এর সাত বছর পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের। আফগানিস্তান অধিনায়ক হাশমতউল্লাহ শহীদি এসেছেন সাকিব অধিনায়কত্ব (২০১১) ছাড়ার দুই বছর পর। কিন্তু এসব পরিসংখ্যান আস্ত গাধা। আগেভাগে অধিনায়কত্ব পেলেই যদি বিশ্বকাপে ভালো করা যেত, তাহলে স্টিভ ওয়াহ অধিনায়কত্ব পাওয়ার দুই বছরের মধ্যে বিশ্বকাপ জিততে পারতেন না।

এবার বিশ্বকাপে কিন্তু তেমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা আছে। ফেবারিট-তত্ত্ব অনুযায়ী এবার বিশ্বকাপে চার ফেবারিট—ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও পাকিস্তান। ২০১৬ থেকে ওয়ানডেতে ‘মেকশিফট’ অধিনায়কের কাজ চালালেও জশ বাটলার ইংল্যান্ডের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে অধিনায়কত্ব পেয়েছেন গত বছরের জুনে। অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও গত বছরের অক্টোবরে। পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমেরও বেশি দিন হয়নি। পাকিস্তানের ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে বছর তিনেক। আর রোহিত ভারতের ওয়ানডে অধিনায়কের দায়িত্ব পেয়েছেন দুই বছর আগে। এই চার ফেবারিটের মধ্য থেকে বিশ্বকাপ উঠতে পারে যে কারও হাতে। ভালো অধিনায়কত্ব তার পূর্বশর্ত। বাবরের এ নিয়ে একটু দুর্নাম আছে। ম্যাচ অ্যাওয়ারনেস কম এবং অতটা আক্রমণাত্মক নন। রোহিত আবার আক্রমণাত্মক হলেও মাঝেমধ্যে মেজাজ ও ধৈর্য হারিয়ে ফেলেন। বাটলার ও কামিন্স রোমাঞ্চকর। বাটলার ইংল্যান্ডের মার মার কাট কাট ক্রিকেটের ‘বিজ্ঞাপন’। কামিন্স অস্ট্রেলিয়ান পেস আক্রমণের নেতা।

নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস এবার বিশ্বকাপে কনিষ্ঠতম অধিনায়ক

নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস এবার বিশ্বকাপে কনিষ্ঠতম অধিনায়কছবি: আইসিসি

কেইন উইলিয়ামসন ও সাকিব বাদে অধিনায়ক হিসেবে বাকি আট দলের সবারই এটা প্রথম বিশ্বকাপ। নেদারল্যান্ডস অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডসের ওপর চাপটা সম্ভবত একটু বেশিই। না, সেটা রোহিতের মতো মোটেও অমিত প্রত্যাশার নয়। ২৭ বছর বয়সী এডওয়ার্ডস এবার বিশ্বকাপে কনিষ্ঠতম অধিনায়ক। ডাচদের নিয়ে বিশ্বকাপে খেলা এখনো তাঁর কাছে অভিজ্ঞতাই। মোটামুটি ২৭ থেকে ৩৬ বছরের মধ্যে এবার বিশ্বকাপে ১০ অধিনায়কের বয়স। ছত্রিশে আছেন দুজন। ৩৬ বছর ১২৮ দিন (১৭ সেপ্টেম্বর) বয়সী রোহিত শর্মা, অন্যজন ৩৬ বছর ১৭৭ দিন বয়সী সাকিব। হ্যাঁ, বাংলাদেশ অধিনায়কই এবার বিশ্বকাপে অধিনায়কদের ‘মুরুব্বি’। অন্য ভাষায় অধিনায়কদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সী।

উইলিয়ামসন আবার বিশ্বকাপে ম্যাচ জয়ের সংখ্যায় এগিয়ে। ১০ ম্যাচে ৬ জয়। ২০১৫ বিশ্বকাপে এক ম্যাচসহ সাকিব ৭ ম্যাচে পেয়েছেন ৩ জয়। এবার বিশ্বকাপ যেহেতু ভারতের মাটিতে, অধিনায়কদের কন্ডিশন সম্পর্কে জানাও গুরুত্বপূর্ণ। আইপিএলে খেলার অভিজ্ঞতা তাতে ভালোই কাজে লাগবে। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সম্ভবত সৌরভ গাঙ্গুলীর ওই কথাটি, ‘অধিনায়কের অন্য চোখ আছে, যেটা সাধারণ খেলোয়াড়ের নেই। অধিনায়কই খেলোয়াড়কে ঠেলে সামনে এগিয়ে দেন।’

বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে দলের খেলোয়াড়দের কাছ থেকে সেরাটা বের করে আনা খুব গুরুত্বপূর্ণ। অধিনায়কদের এই ক্ষমতা থাকতে হয়। সে জন্য নেতৃত্ব দিতে হয় সামনে থেকে। বলতে পারেন, তাহলে অধিনায়ককে ঠেলে কে? মহেন্দ্র সিং ধোনি বলবেন, ‘দর্শকের জন্য নয়, দেশের জন্য খেলো।’

ব্যস, এতটুকুই যথেষ্ট।

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.