তীব্র দাবদাহের পর প্রকৃতি এখন অনেকটাই শীতল। এই মেঘলা আকাশ, আবার এই ঝুম বৃষ্টি। এরই মধ্যে সবুজে চোখ জুড়াতে ঘুরে আসতে পারেন বৃক্ষমেলায়। মেলায় প্রবেশ করলে মনে হয় যেন ফলে–ফুলে সুশোভিত এক উদ্যান। প্রতিটি স্টলের ভেতরে আর সামনে হরেক রকমের ফলদ, বনজ, ঔষধি আর শোভাবর্ধনকারী গাছপালার নান্দনিক সমাবেশ। এর মধ্যে প্রথমেই নজর কেড়ে নেবে গাছে ঝুলে থাকা থোকা থোকা আম।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে (আগের বাণিজ্য মেলার মাঠে) সম্প্রতি গিয়ে দেখা যায়, বড় বড় ড্রামে লাগানো আমগাছগুলোতে ধরেছে রংবেরঙের বাহারি আম। এসব আমের নামও বাহারি। হাই টু টু, রেড পালমার, ব্ল্যাক স্টার, থাই কিং, নাঙ্গুলী, কিং চাকা পাত, হানি ডিউ, ব্রুনেই কিং, থাই ক্যান, চিয়াং মাই, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, থাই কিউ জাত, থাই কাঁচা মিঠা, তোতাপুরি আমসহ আরও অনেক জাত। তবে এর বেশির ভাগই বিদেশি জাতের। এ ছাড়া পাওয়া যায় ল্যাংড়া, আম্রপালি, গোপালভোগ, বি-৭, সূর্যডিম, ফজলিসহ বিভিন্ন জাতের আমের চারা।
বৃক্ষমেলায় কয়েকটি স্টলের মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মানুষের বেশি আগ্রহ আমের চারার প্রতি। কারণ, এসব চারা লাগানোর দুই থেকে তিন বছরের মধ্যেই ফল পাওয়া যায়। চাহিদার দিক দিয়ে এরপর রয়েছে পেয়ারা ও লেবুর চারা।
![মেলায় বাহারি জাতের আম গাছ](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-07%2Fd9a4d3ce-52bb-42aa-8fcb-e30edd515b33%2FWhatsApp_Image_2023_07_05_at_9_26_36_PM.jpeg?auto=format%2Ccompress&fmt=webp&format=webp&w=640&dpr=1.0)
মেলায় বাহারি জাতের আম গাছছবি: প্রথম আলো
মেলার দর্শনার্থীদের বেশির ভাগ রাজধানীর বাসিন্দা। নগরবাসীর কথা মাথায় রেখে বৃক্ষমেলায় নার্সারি ব্যবসায়ীরা গাছের চারা এনেছেন। গাছ লাগানোর জন্য রয়েছে ছোট ও বড় টব, ড্রাম এবং বিশেষ ধরনের (জিও) ব্যাগ।
ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে মেলায় আসা বেলি গার্ডেন নামের একটি নার্সারির মালিক জিয়াউদ্দিন বলেন, তাঁর স্টলে বিদেশি প্রায় ৩০ জাতের আম রয়েছে। বেশি বিক্রি হয় আমের চারা। মানুষ ছাদে লাগানোর জন্য চারা নিয়ে যান। প্রতিদিন তিনি ১০০ থেকে ২০০টি চারা বিক্রি হয়। দাম ২০০ থেকে ১ হাজার টাকা। ফল ধরেছে এমন গাছের দাম আরেকটু বেশি। তিনি বলেন, কেউ চাইলে তাঁরা পরিচিত ভ্যানচালকদের মাধ্যমে চারা বাড়িতে পৌঁছে দেন।
ডিপ্লোমা কৃষিবিদ নার্সারির স্টলের সামনে একটি গাছে ঝুলছিল বিশাল আকারের কয়েকটি আম। নাম ব্রুনাই কিং। ওজন দুই থেকে আড়াই কেজি। নার্সারিটির এক কর্মী বলেন, ড্রামের বদলে সরাসরি বাগানে রোপণ করা গাছে ধরা আমের ওজন আরও বেশি হয়। কোনো কোনোটির ওজন হয় প্রায় পাঁচ কেজি। খেতে মিষ্টি।
![ব্রুনেই কিং আম। একটির ওজন দুই থেকে আড়াই কেজি](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-07%2F5771cac9-bfa4-45f1-92c0-603a2b19483b%2FWhatsApp_Image_2023_07_05_at_9_26_31_PM.jpeg?auto=format%2Ccompress&fmt=webp&format=webp&w=640&dpr=1.0)
ব্রুনেই কিং আম। একটির ওজন দুই থেকে আড়াই কেজিছবি: প্রথম আলো
নার্সারিটির সামনে নজরকাড়ার মতো আমগাছের একটি চারা ছিল। অনেক আম ঝুলছিল। দাম জানতে চাইলে বিক্রেতা বললেন, ৩০ হাজার টাকা।
বাজারের ফর্দের মতো কাগজ হাতে নিয়ে মেলায় ঘুরছিলেন এক ব্যক্তি। নানা গাছের চারা দেখছিলেন। আসলে ফর্দটি গাছের নামের তালিকা। ফর্দ হাতে থাকা ব্যক্তি মিরপুরে বেসরকারি একটি হাসপাতালের পরিচালক। কথা বললেন, কিন্তু নাম প্রকাশে অনীহা। জানালেন গাছ কিনছেন হাসপাতালের ছাদের জন্য।
![নজর কাড়ে লাল রঙের এই আম](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-07%2F85604344-6697-4262-bb00-3e19900d4e70%2FWhatsApp_Image_2023_07_05_at_9_26_38_PM.jpeg?format=webp&w=640&dpr=1.0)
![গাছে থোকায় থোকায় ঝুলছে আম](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-07%2Fb71a2642-fc25-40da-8759-d3037f804351%2FWhatsApp_Image_2023_07_05_at_9_26_40_PM__1_.jpeg?format=webp&w=640&dpr=1.0)
![একেক আমের একেক আকার](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-07%2Ff3f7aea9-3b9b-4b37-913e-21098677ec2e%2FWhatsApp_Image_2023_07_05_at_9_26_43_PM__1_.jpeg?format=webp&w=640&dpr=1.0)
![গাছেই হলুদ হয়ে গেছে আম](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-07%2F90a4ca3d-d5a1-491f-9a9b-da6ca8092997%2FWhatsApp_Image_2023_07_05_at_9_26_42_PM.jpeg?format=webp&w=640&dpr=1.0)
![থাইল্যান্ডের প্রজাতি চিয়াং মাই](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-07%2F221c8a16-599a-4c0d-abc8-cf008f1c55c7%2FWhatsApp_Image_2023_07_05_at_9_26_41_PM.jpeg?format=webp&w=640&dpr=1.0)
![বৃক্ষমেলায় ঢুুকলেই প্রথমেই নজর কাড়ে আমের গাছ](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-07%2F994b24b1-ff92-4d52-a19d-059293843ca8%2FWhatsApp_Image_2023_07_05_at_9_26_35_PM.jpeg?format=webp&w=640&dpr=1.0)
![সারি সারি করে সাজানো রয়েছে আমের চারা](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-07%2F90e375ca-1d75-4357-818e-c984e3d084c8%2FWhatsApp_Image_2023_07_05_at_9_26_33_PM__2_.jpeg?format=webp&w=640&dpr=1.0)
নজর কাড়ে লাল রঙের এই আমছবি: প্রথম আলো
ওই ব্যক্তি আরও জানান, এখন গাছের চারার সঙ্গে পরিচর্যার চুক্তিতেও গাছ কেনা যায়। ছয় মাসের চুক্তিতে তিনি একটি নার্সারি থেকে চারা কিনেছিলেন। নার্সারিটির কর্মীরাই গাছের যত্ন নিয়েছে। চারা মারা গেলে আরেকটি দেওয়ার শর্তও ছিল। সেসব গাছে ফল এসেছে। এবার মেলা থেকে ৩৬টি আমের চারা ও অন্যান্য গাছ কিনেছেন।
![এই আম গাছের দাম চাওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-07%2Fc45a1c94-93e5-4da8-931f-0fb405151b08%2FWhatsApp_Image_2023_07_05_at_9_26_33_PM.jpeg?auto=format%2Ccompress&fmt=webp&format=webp&w=640&dpr=1.0)
এই আম গাছের দাম চাওয়া হয় ৩০ হাজার টাকাছবি: প্রথম আলো
জাতীয় বৃক্ষমেলা শুরু হয়েছে গত ৫ জুন, চলবে ১২ জুলাই পর্যন্ত। এবার মেলার প্রতিপাদ্য— ‘গাছ লাগিয়ে যত্ন করি, সুস্থ প্রজন্মের দেশ গড়ি’। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত মেলা খোলা থাকে।
মেলায় গাছের চারার পাশাপাশি সার, মাটি, টব, বীজ, বালাইনাশক, বাগান পরিচর্যার দরকারি সব সরঞ্জামাদি, কৃষিবিষয়ক বই ও দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়।
![ভ্য়ানে করে আমের চারা বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। মেলায় ফলের চারার মধ্যে আমের চারাই বেশি বিক্রি হয় বলে জানান বিক্রেতারা](https://images.prothomalo.com/prothomalo-bangla%2F2023-07%2F4387191f-ea7d-4608-a450-53c52c313185%2FWhatsApp_Image_2023_07_05_at_9_26_32_PM.jpeg?auto=format%2Ccompress&fmt=webp&format=webp&w=640&dpr=1.0)
ভ্য়ানে করে আমের চারা বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি। মেলায় ফলের চারার মধ্যে আমের চারাই বেশি বিক্রি হয় বলে জানান বিক্রেতারাছবি: প্রথম আলো
বৃক্ষপ্রেমীরা গাছ লাগাবেন। সেই গাছ বড় হবে, ফল দেবে, ফুল দেবে, দেবে আনন্দ। তবে এই আনন্দের পাশাপাশি নগরবাসীর জন্য আরও আছে সুখবর। গত ১৪ জুন সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত এক সভায় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, ছাদবাগান করলে এখন থেকে গৃহকরের ওপর ১০ শতাংশ ছাড় পাওয়া যাবে।
তাই গাছ লাগিয়ে ফেলুন। গাছ লাগানোর উপযুক্ত সময়ও বর্ষাকাল। বন সংরক্ষণবিষয়ক প্রতিষ্ঠান আরণ্যক ফাউন্ডেশনের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ফরিদউদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে বৃষ্টি বেশি হয়। এ সময় মাটি ভেজা থাকে। তাই চারা রোপণ করলে গাছের বৃদ্ধি দ্রুত ও ভালো হয়।
Add comment