Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ধাক্কা দিলেন কর্মকর্তা

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে পরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ১২ অক্টোবর রাজধানীর ফার্মগেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে এ ঘটনা ঘটে।

যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁর নাম মো. আজিজুল ইসলাম। ঘটনার দিনই বিষয়টি লিখিতভাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাহিদ রশীদকে জানান মহাপরিচালক মো. এমদাদুল হক তালুকদার। তবে অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন আজিজুল।

এ ঘটনার আগে ৫ অক্টোবর আজিজুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

আজিজুল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভাইরোলজি অনুবিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) এবং ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি সার্ভিস জোরদারকরণ’ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে (ডিজি) শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ উঠেছে পরিচালক পদমর্যাদার এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। ১২ অক্টোবর রাজধানীর ফার্মগেটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে এ ঘটনা ঘটে।

যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, তাঁর নাম মো. আজিজুল ইসলাম। ঘটনার দিনই বিষয়টি লিখিতভাবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাহিদ রশীদকে জানান মহাপরিচালক মো. এমদাদুল হক তালুকদার। তবে অভিযোগ মিথ্যা বলে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন আজিজুল।

এ ঘটনার আগে ৫ অক্টোবর আজিজুলকে সাময়িক বরখাস্ত করে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

আজিজুল প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ভাইরোলজি অনুবিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) এবং ‘জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় ভেটেরিনারি সার্ভিস জোরদারকরণ’ প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।

জানা গেছে, বরখাস্ত করে মন্ত্রণালয় যে প্রজ্ঞাপন জারি করে, তা প্রত্যাহার করার জন্য চিঠি দেন আজিজুল। সেই চিঠি মন্ত্রণালয়ে যাবে মহাপরিচালকের মাধ্যমে। তবে মহাপরিচালক চিঠি মন্ত্রণালয়ে পাঠাননি। চিঠি যেন পাঠান, এ জন্য ঘটনার দিন বেলা একটার দিকে মহাপরিচালকের কক্ষে যান আজিজুল। তখন এমদাদুল হক তাঁর কক্ষে ছিলেন না। দপ্তরের বাইরে পেয়ে ‘জরুরি কথা আছে’ বলে মহাপরিচালকে অধিদপ্তরের পরিচালকের (প্রশাসন) কক্ষে নিয়ে যান আজিজুল।  

সচিবকে দেওয়া চিঠিতে মহাপরিচালক বলেন, পরিচালকের কক্ষে প্রবেশ করলে আজিজুল তাঁর সাময়িক বরখাস্ত প্রত্যাহারের আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য তাঁকে চাপ দিতে থাকেন। আবেদনটি মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হলে প্রশাসনিকভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলে জানান তিনি।  

চিঠির বর্ণনা অনুযায়ী, এ কথা শুনে আজিজুল চেঁচামেচি করতে থাকেন। পরিচালক (প্রশাসন) তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেও মহাপরিচালকের দিকে তেড়ে যান তিনি। মহাপরিচালক কক্ষ ত্যাগ করতে চাইলে তাঁর পথ রোধ করে আজিজুল চিৎকার করতে থাকেন। তিনি মহাপরিচালককে প্রাণনাশের হুমকিও দেন। একপর্যায়ে মহাপরিচালককে ধাক্কা দেন এবং শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন।

তবে এ অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন আজিজুল ইসলাম। এ অভিযোগ তাঁর সামাজিক মর্যাদা ক্ষুণ্নের গভীর চক্রান্ত দাবি করে পাল্টা অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘আমি ডিজির (মহাপরিচালক) হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছি, যেন আমার আবেদন ঊর্ধ্বমুখী করেন। আর তিনি অভিযোগ করেছেন, আমি তাঁকে ধাক্কা দিয়েছি, যা সত্য নয়।’

ঘটনার শুরু যেভাবে

বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের সভাপতি কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। মহাসচিব আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। আজিজুল কৃষিমন্ত্রীর অনুসারী হিসেবে এবং প্রাণিসম্পদের মহাপরিচালক এমদাদুল হক আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাহাউদ্দিনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

আজিজুল বঙ্গবন্ধু ভেটেরিনারি পরিষদের মহাসচিব। আজিজুলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে—এমন একটি সূত্রের দাবি, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ভেটেরিনারি পরিষদের পক্ষ থেকে দোয়া মাহফিল ও গণভোজের পরিকল্পনা করা হয়। এ জন্য অধিদপ্তরের খোলা একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে অসৌজন্যমূলক বার্তা আদান-প্রদানসহ কিছু কারণে সে পরিকল্পনা বাতিল হয়।

ওই সূত্র আরও জানায়, জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে গত ২৬ আগস্ট প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর চত্বরে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাহাউদ্দিন নাছিম। চিঠি ইস্যু করে সে অনুষ্ঠানে অধিদপ্তরের সব কর্মকর্তাকে উপস্থিত থাকতে বলেন মহাপরিচালক এমদাদুল হক। পরদিন খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে কৃষিমন্ত্রীর উপস্থিতিতে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আরেকটি আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল ছিল।

সেখানে আমন্ত্রণ দেওয়া হলেও মহাপরিচালক ও তাঁর অনুসারীরা উপস্থিত ছিলেন না। এ নিয়ে মহাপরিচালক এমদাদুল ও পরিচালক আজিজুলের দ্বন্দ্ব চলছিল। এর জেরেই আজিজুলের বরখাস্ত হওয়াসহ অন্য ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করে এই সূত্র।

অবশ্য অপর এক সূত্রে জানা গেছে, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে খোলা হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ‘প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের সক্ষমতা জোরদারকরণ’ প্রকল্পের পরিচালক মো. আনিসুর রহমান একটি অডিও দেন।

অডিওতে শোনা যায়, এক সাংবাদিককে অধিদপ্তরের কোনো এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের জন্য বলছিলেন আজিজুল। অডিও নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আজিজুল ও আনিসুরের মধ্যে অসৌজন্যমূলক ও ব্যক্তিগত বিদ্বেষমূলক বার্তা আদান-প্রদান হয়।

জানা গেছে, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের ঘটনা তদন্তে গত ২৬ সেপ্টেম্বর তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর। ওই কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছিল।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তদন্ত কমিটির সভাপতিকে সহযোগিতা করেননি আজিজুল। এ ছাড়া সচিবালয়ে এক বৈঠক শেষে প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সামনে মহাপরিচালক এমদাদুল হক ও তদন্ত কমিটির সভাপতির সঙ্গে তর্কে জড়ান তিনি। এরপর সেদিন প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের কক্ষে মহাপরিচালক যখন অবস্থান করছিলেন, তখন আজিজুল অনুমতি ছাড়া সচিবের কক্ষে ঢোকেন। এসব কারণে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের আগেই তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

তদন্ত কমিটির সভাপতি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পরিকল্পনা শাখার পরিচালক মলয় কুমার শূর। তিনি বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

তবে আজিজুল দাবি করেন, তদন্ত কমিটির সভাপতি মলয় কুমারকে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে বলেছিলেন তিনি।

রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ

আজিজুল ১৯তম বিসিএস কর্মকর্তা। ছয় কর্মকর্তাকে টপকে বর্তমান প্রশাসনের সময় তাঁকে পরিচালক করা হয়। অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এবং প্রাণিসম্পদমন্ত্রী, সচিব ও মহাপরিচালকের সহযোগিতায় পরিচালকের সমপর্যায়ের পদ পান তিনি। এতে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের অন্য কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা রয়েছে।

আজিজুল প্রকল্প পরিচালক হতে প্রভাব খাটান বলেও অভিযোগ রয়েছে। প্রকল্পে আজিজুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগে তুলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে গত সেপ্টেম্বরে একটি চিঠি দিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এফ ইন্টারন্যাশনাল ট্রেডার্স। এ ছাড়া বর্তমানে আজিজুলের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের একটি অভিযোগে তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এসব অভিযোগ নিয়ে জানতে চাওয়া হলে কোনো জবাব দেননি আজিজুল।

মহাপরিচালক এমদাদুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাহিদ রশীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.