Nazihar News Network
News from Nazihar It Solution

চিকিৎসকের পদ ২২, আছেন ৫

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৩১ শয্যার জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে ৫ জন কর্মরত আছেন। যার মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হেলেনা আক্তারকে দাপ্তরিক কাজ ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সভা সামলাতে হয়। বাকি মাত্র চারজন চিকিৎসককে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ৫০ শয্যার জনবল অনুমোদন হলে ২২ চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি হবে।

চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনবলসংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। ১৯৭৩ সালে দামুড়হুদা উপজেলা সদর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে চিৎলা গ্রামে ৩১ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু করা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০১৮ সালে ৫০ শয্যায় উন্নীত করার প্রশাসনিক অনুমোদন মেলে। কিন্তু এখনো ৫০ শয্যার জনবল ও ওষুধ-পথ্যের অনুমোদন মেলেনি। এমনকি ৩১ শয্যার বিপরীতে যে জনবল থাকার কথা, তা–ও নেই। জনবলসংকটের কারণে রোগীদের সেবা দিতে কর্তৃপক্ষকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, ৩১ শয্যার জনবলকাঠামো অনুযায়ী ৯ জন চিকিৎসকের পদ থাকলেও বর্তমানে ৫ জন কর্মরত আছেন। যার মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হেলেনা আক্তারকে দাপ্তরিক কাজ ও উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন সভা সামলাতে হয়। বাকি মাত্র চারজন চিকিৎসককে রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। ৫০ শয্যার জনবল অনুমোদন হলে ২২ চিকিৎসকের পদ সৃষ্টি হবে।

৮ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে ৫০ শয্যার নতুন ভবন তৈরি করা হয়। ২০১৫ সালের ৭ জুলাই ভবনটি হস্তান্তর করা হলেও সেখানে সেবা কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি।

এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাসিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গত মার্চ মাসে অন্তর্বিভাগে ৫৫৯ রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯ হাজার ৯৬০ জন। মার্চে ৩২টি স্বাভাবিক প্রসব এবং একটি সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার হয়েছে। এর বাইরে হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষে (ওটি) গত মাসে আর কোনো অস্ত্রোপচার হয়নি।

চিকিৎসকেরা বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক, গাইনি ও সার্জারি বিশেষজ্ঞ থাকলে হাসপাতালের অস্ত্রোপচার কক্ষ (ওটি) পুরোপুরি চালু রাখা সম্ভব হতো। তাহলে সিজার বা ছোটখাটো অস্ত্রোপচার নিয়মিত করা যেত। ওটির যন্ত্রপাতি দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার না করার ফলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। টেকনিশিয়ান-সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় পরীক্ষার জন্য সাধারণ মানুষকে জেলা শহর অথবা বেসরকারি ক্লিনিকে যেতে হচ্ছে।

গত রোববার বেলা ১১টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ফারহানা ওয়াহিদ অন্তর্বিভাগে, চিকিৎসা কর্মকর্তা আয়েশা সিদ্দিকা ও ওয়ালিদ মাহমুদ বহির্বিভাগে এবং নুসরাত জাহান জরুরি বিভাগে চিকিৎসা দিচ্ছেন। এসব চিকিৎসককে ঘিরে রোগীদের ভিড় চোখে পড়ে।

গাইনি ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ডপাড়ার নাজমা খাতুন বলেন, শনিবার সারা দিন রোজা থেকে সন্ধ্যায় গরমে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর অভিযোগ, ভর্তির পর থেকে রোববার বেলা ৯টা পর্যন্ত এমবিবিএস কোনো চিকিৎসকের দেখা পাননি। ভর্তি রোগীদের স্যাকমো ও নার্সদের চিকিৎসাতেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে।

পুরুষ ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন উপজেলার মুন্সীপুর গ্রামের অসুস্থ আনসার আলীকে (৬০) নিয়ে স্ত্রী শাহানারা খাতুনকে উদ্বিগ্ন দেখা গেল। তিনি বলেন, ‘শনিবার ভত্তির সুমায় উনার (স্বামীর) পিচ্ছাপের জায়গায় একজন ডাক্তার নল দিয়েলো। সিডা আইজ (রোববার) সকালে খুলে দিয়ার কতা। অ্যাকন শুনচি সেই ডাক্তার নাকি সুমবারে আসপে।’

পাশের শয্যায় চিকিৎসাধীন রোকনুজ্জামান (৪০) বলেন, ‘আমার মাতা গরম, পা গরম। বুক ধড়ফড়, রাইতে ঘুম হয় না। হাসপাতলতি ক্যালসিয়াম ট্যাবলেটটা দিয়েচে। বাকি সপ ওষুদই কিনতি হয়েচে। রাত্তিরি ডাক্তার আসিনি, নার্সরা ইনজেকশন দি গিছিল।’ 

কর্তৃপক্ষ জানায়, সরকারি এই হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট (মেডিসিন) আবুল হোসেন ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (গাইনি) হোসনে জারী তাহমিনা ২০১০ সাল থেকে এবং চিকিৎসা কর্মকর্তা লাইলা শামীমা শারমিন গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে সাময়িক আদেশে চুয়াডাঙ্গা জেলা হাসপাতালে সংযুক্ত আছেন। জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি) ও জুনিয়র কনসালট্যান্ট (অ্যানেসথেসিয়া) পদ দুটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। দীর্ঘ ৫০ বছরেও এখানে জরুরি চিকিৎসা কর্মকর্তার (ইএমও) পদ সৃষ্টি করা হয়নি। জরুরি প্রয়োজনে উপজেলার সাতটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তাদের পর্যায়ক্রমে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্ব পালন করতে হয়।

হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্সের ২৫টি পদের মধ্যে একটি পদ শূন্য এবং দুজনকে প্রেষণে উপজেলার বাইরে পাঠানো হয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল) থাকলেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে ছুটি অনুমোদন ছাড়াই অনুপস্থিত আছেন। মেডিকেল টেকনোলজিস্টকে (ল্যাব) প্রেষণে পাঠানো হয়েছে। আয়া, ওয়ার্ড বয় ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীর ১০টি পদ থাকলেও সেখানে মাত্র একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী কর্মরত আছেন। মাত্র একজনকে দিয়ে বিশাল এই প্রতিষ্ঠানের পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা অসম্ভব। হাসপাতালের দুটি অ্যাম্বুলেন্সের মধ্যে একটি এবং তিনটি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে দুটি দীর্ঘদিন ধরেই অচল।

এসব ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) হেলেনা আক্তার বলেন, তিনি গত ২০ ডিসেম্বর এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগ দিয়েছেন। তিনি জনবলসংকট সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে অধিদপ্তর ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিঠি দিয়েছেন। হেলেনা আক্তার বলেন ‘সীমিত জনবল দিয়েই আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

Add comment

Follow us

Don't be shy, get in touch. We love meeting interesting people and making new friends.