২০২২ সালে সোনায় মোড়ানো বছর কাটে আর্জেন্টিনার। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থেকে কাতার বিশ্বকাপে রূপকথা রচনা করে আলবিসেলেস্তেরা। ৩৬ বছরের অপেক্ষার ইতি টেনে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় লাতিন আমেরিকার দলটি। বিশ্ব জয়ের আগে আলবিসেলেস্তেদের ঝুলিতে ওঠে ফিনালিসিমা ট্রফি। আর্জেন্টাইনদের সাফল্যে মুখ্য ভূমিকায় ছিলেন লিওনেল স্কালোনি, লিওনেল মেসি এবং এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কোচ স্কালোনির জাদুর স্পর্শেই তৃতীয় শিরোপার দেখা পায় আর্জেন্টিনা। দ্যুতি ছড়ানো পারফরম্যান্সে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন অধিনায়ক মেসি। আর আর্জেন্টিনার গোলবারের অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেন এমি মার্টিনেজ। আর্জেন্টিনার সাফল্যে অসামান্য অবদান রেখে ফিফার ‘বেস্ট অ্যাওয়ার্ডস’ জেতেন স্কালোনি, মেসি এবং মার্টিনেজ। আর গ্যালারিতে বসে মেসি-মার্টিনেজদের সমর্থন যুগিয়ে স্বীকৃতি পেয়েছে আর্জেন্টাইন সমর্থকরাও।
সোমবার রাতে ফিফার বর্ষসেরার পুরস্কার ‘বেস্ট অ্যাওয়ার্ডস’ দেয়া হয় মোট আটটি ক্যাটাগরিতে- বর্ষসেরা পুরুষ ও নারী খেলোয়াড়, বর্ষসেরা পুরুষ ও নারী কোচ, বর্ষসেরা পুরুষ ও নারী গোলকিপার এবং গোল ও সেরা ফ্যান।
সেরা কোচ নির্বাচিত হন আর্জেন্টিনার লিওনেল স্কালোনি। সেরা ফুটবলার হয়েছেন লিওনেল মেসি। সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার জিতেছেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। আর বর্ষসেরা সমর্থকের পুরস্কার জিতেছে আর্জেন্টাইনরা।
লিওনেল স্কালোনি
২০১৮ বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকেই বাদ পড়ে আর্জেন্টিনা। এরপরই রূপকথার ‘কিং মিডাস’ হয়ে আর্জেন্টিনার দায়িত্ব নেন লিওনেল স্কালোনি। যার জাদুর স্পর্শে বদলে যায় আলবিসেলেস্তেরা। যিনি ভঙ্গুর আর্জোিন্টনাকে খাঁটি সোনা বানিয়ে তুলেছেন। ২০২১ সালে স্কালোনির অধীনে ২৮ বছরের শিরোপা খরা ঘুচিয়ে কোপা আমেরিকায় চ্যাম্পিয়ন হয় আর্জেন্টিনা। এরপর ফিনালিসিমায় ইতালিকে হারায় আকাশী-সাদারা। এরপর কাতারে সর্বোচ্চ সাফল্য পায় লিওনেল স্কালোনির আর্জেন্টিনা। অসাধারণ কোচিং করিয়ে ফিফার চোখে ২০২২ সালের সেরা কোচ নির্বাচিত হয়েছেন স্কালোনি। দ্য বেস্ট হতে রিয়াল মাদ্রিদ কোচ কার্লো আনচেলত্তি এবং ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলাকে হারিয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী এই কোচ।
লিওনেল মেসি
বিশ্বকাপ জয়ের আগেই কিংবদন্তির তকমা পান লিওনেল মেসি। কাতার আসরের সাফল্য মেসির ক্যারিয়ারকে পূর্ণতা দেয়। বিশ্বকাপ জিতে অমরত্ব লাভ করেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। কাতার আসরে ৩৬ বছর বয়সী মেসি ৭ গোল করে ম্যান অব দ্য টুর্নামেন্ট হন। শুধু বিশ্বকাপ নয়; গোটা বছর আন্তর্জাতিক ফুটবলে নৈপুণ্য দেখিয়েছেন মেসি। ২০২২ সালে আর্জেন্টিনার হয়ে ১৪ ম্যাচ খেলে ১৮ গোল করেন তিনি। সামগ্রিক পারফরম্যান্সের বিচারে ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন মেসি। পুরুষ ফুটবল জাতীয় দলের কোচ ও অধিনায়ক, সাংবাদিক এবং ফিফার ওয়েবসাইটে দেয়া ফুটবলপ্রেমীদের দেয়া ভোটে দ্য বেস্ট ফিফা ম্যানস অ্যাওয়ার্ডের লড়াইয়ে ফ্রান্সের দুই তারকা খেলোয়াড় কিলিয়ান এমবাপ্পে এবং করিম বেনজেমাকে হারান মেসি। এ নিয়ে সপ্তমবারের মতো পুরস্কারটি জিতলেন পিএসজির আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
এমিলিয়ানো মার্টিনেজ
সাল ২০১৭। নিজের ফেসবুক আইডি থেকে বিমর্ষ একটি ছবি আপলোড দিয়ে এমিলিয়ানো মার্টিনেজ লিখেছিলেন, ‘আমারও সময় আসবে।’ আর্সেনালের আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্টিনেজ তখন স্প্যানিশ লা লিগার দল হেতাফেতে লোনে খেলেন। অনেক উত্থান-পতনের পর অবশেষে সময়টা এসেছে মার্টিনেজের। আর্জেন্টিনার গোলবারে কোটি সমর্থকের ভরসার নাম হয়ে উঠেছেন তিনি। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক অভিষেকের পর আর্জেন্টিনার তিন শিরোপা- কোপা, ফিনালিসিমা এবং বিশ্বকাপ জয়ে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন দিবু মার্টিনেজ। ২০২১ সালে কলম্বিয়ার বিপক্ষে টাইব্রেকারে তার নৈপুণ্যেই সেমিফাইনাল জিতেছিল আর্জেন্টিনা। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে এমি মার্টিনেজই হারান। এরপর ফাইনালে ফ্রান্সকে হারানোর নায়কও তিনি। কাতার আসরে ৭ ম্যাচ খেলে ৭টি দুর্দান্ত সেভ করেন এমিলিয়ানো। পেনাল্টি বক্সের ভেতর থেকে ফেরান ৩টি শট। ক্লিন শিট ৩টি। টাইব্রেকারে শট ফেরান মোট ৩টি। দাপুটে পারফরম্যান্সে হন বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক। এবার ফিফার বর্ষসেরা গোলকিপারের পুরস্কারও উঠলো দিবুর হাতে। সেরা হতে রিয়াল মাদ্রিদের বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া এবং মরোক্কান গোলকিপার ইয়াসিন বুনুকে হারান এমি মার্টিনেজ।
Add comment